
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পাওয়া যায়নি; বরং দেশকে রাহুমুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর যে রাক্ষস বসেছিল, তাকে তার জন্মস্থানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ শহরের ইবি রোড এলাকায় জুলাই-আগস্ট শহীদদের স্মরণে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
টুকু বলেন, “একটা দেশের স্বাধীনতা একবার হয়। যে স্বাধীনতার যুদ্ধ আমাদের একটা মানচিত্র দিয়েছে, আমাদের পতাকা দিয়েছে, আমাদের শাসনতন্ত্র দিয়েছে। সেই যুদ্ধ একবার হয়েছে। আর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নতুন করে বাংলাদেশ পাওয়া যায় নাই। বাংলাদেশকে রাহুমুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর যে রাক্ষস বসেছিল সেই রাক্ষসকে যেখানে তার জন্ম সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘চরম ক্রান্তিলগ্ন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এখন আনন্দ করা বা খুশি হওয়ার কিছু নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত এ দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন না হবে, যতক্ষণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলবে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে একমাত্র জনগণের নির্বাচিত সরকার।”
সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গ:
টুকু সরকারের ‘সংস্কার’ দাবির সমালোচনা করে বলেন, “তারা আবার বলে সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে না। আরে সংস্কারের নায়ক হচ্ছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এই বাংলাদেশে তিনি সংস্কার করে যে ইমারত গড়ে গেছেন, সেই ইমারতের উপরই বাংলাদেশ আজকে দাঁড়িয়ে। বিএনপিকে সংস্কার শিখাইতে হবে?” তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ২৭ দফা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করে যোগ করেন, “আমরা সব দলকে নিয়ে চলতে চাই… কারো কোনো উপদেশ বা নতুন আইডিয়া থাকলে ৩১ দফার মধ্যে আমরা তা গ্রহণ করবো।”
ঐতিহাসিক অভিযোগ ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা প্রসঙ্গে টুকু বলেন, “৭১-এ যখন গোটা জাতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে গেছে, তখন ওই দলটি (আওয়ামী লীগ) পাকিস্তানের পক্ষে গেছে, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গিয়ে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি করতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনেই করতে হবে… পাকিস্তান আমাদের শোষণ করেছে এই কারণে দেশের মানুষ এক হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।”
স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালোচনা করে টুকু দাবি করেন, “৭১ থেকে ৭৫ এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে একটা শ্মশানে রূপান্তর করেছিল। রক্ষী বাহিনী বানিয়েছিল, সিরাজগঞ্জে অনেকগুলো ক্যাম্প বানিয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগের যারা বিরোধিতা করতো তাদের ধরে এনে হত্যা করা হতো। আওয়ামী লীগ মানুষকে কোনোদিন স্বস্তি দেয় নাই… আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশের মানুষকে কঙ্কাল বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।”
পিআর ব্যবস্থা নিয়ে সংশয়:
নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির প্রস্তাব নিয়ে টুকু বলেন, “৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর আমরা দেখেছি একটি দল তারা কী চায় তারা নিজেরাই বোঝে না। বলে পিআর দিতে হবে… ওই যে রিলের মধ্যে বলে, ভোট দিব সন্দীপে প্রার্থী আনবে মালদ্বীপ থেকে। এই হলো পিআর। যে পিআর দেশের সাধারণ মানুষ বোঝে না, তার কী দরকার?”
সমাবেশের অন্যান্য বক্তা:
জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মকবুল চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর কায়েম সবুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ সুইট ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস প্রমুখ।